নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাশঁগাড়ী (২) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোকসানা ইসলামের দায়ের করা একাধিক মামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্বামী মনিরুজ্জামান মনির।
রোকসানা ইসলামের স্বামী মনিরুজ্জামান ও তার পরিবারর জানান, রায়পুরা ইউনিয়নের রাজপ্রসাদ গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান মনিরের পারিবারিক সম্মতিতে ২০০৩ সালে বিয়ে হয় নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়েনের নেকজানপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল ইসলামের মেয়ে রোকসানার আক্তারের সাথে।
বিয়ের পরবর্তি সময়ে তাদের দাম্পত্য জিবনের শুরুটা আনন্দময় হলে কয়েক বছর যেতে না যেতেই শুরু হয় পারিবারিক কলহ। এরই জেরে পর্যায়ক্রমে স্ত্রী রোকসানা ইসলাম স্বামীকে ঘায়েল করতে নারী ও শিশূ নির্যাতন, যৌতুক সহ একাধিক মামলায় আসামী করে স্বামী মনিরুজ্জামান মনিরকে। এসব মামলার আসামী হয়ে এবং ছেলে-মেয়েদেরকে কাছে না পেয়ে সে এখন পাগল প্রায়।
দাম্পত্য জীবনের রয়েছে তাদের ৪টি সন্তান। বড় সন্তান বর্তমানে দশম শ্রেণীর ছাত্রী এবং ছোট ছেলের বয়স প্রায় ৫বছর। তাদের এই সাজানো সংসার এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ৪ সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী রোকসানা ইসলাম স্বামীর বাড়ি থেকে অন্যত্র অবস্থান করায় ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় মনিরুজ্জামান মনির। স্ত্রীর হয়রানীমূলক বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত স্বামী মনির স্থানীয় সমাজপ্রতিদের ধারে ধারে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গণমাধ্যম কর্মিদের শরুণাপন্ন হয়।
ভুক্তভোগী স্বামী মনিরুজ্জামান মনির জানান, ২০০৩ সালের উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে আমাদের বিয়ে হয়। শুরুতে ভালো কাটছিলো। পরবির্ততে ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে প্রায়ই মনোমালিন্য হতো। এক পর্যায়ে ২০০৮সালে আমার মাদকাশক্ত শশুর ও শুমুন্ধীর কু-পরামর্শে আমার স্ত্রী বেপরোয়া হয়ে উঠে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে সে আমার নামে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুকের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় ষাটোর্ধ বয়সী আমার বৃদ্ধা মা ও স্বামীর বাড়ি থাকা আমার বোনকেও আসামী করা হয়। উক্ত মামলায় হাজির হলে মহামান্য আদালতের মাধ্যমে সে আমার বাড়ীতে আসে এবং আমার জমিজমা বিক্রি করে সমস্ত টাকা পয়সা তার হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। তার কথায় রাজি না হওয়ায় আবারো আমার অনুপস্থিতিতে সন্তানদেরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং নরসিংদী সদরে বাড়ী রাখার জন্য তাকে ২০ লাখ টাকা না দিলে সে আর সংসারে ফিরবে না বলে সাব জানিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পূণরায় আমার বাড়ীতে আনতে ব্যর্থ হই। পরে আবারো আমার বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে আরো একটি মিথ্যে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায়ও মহামান্য হাইকোর্ট হতে জামিনে আছি। আমার স্ত্রী রোকসানা পেশায় একজন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। আমার চারটি সন্তান তার কাছে রয়েছে। আমাকে এক নজর দেখার সুযোগ দিচ্ছে না। বর্তমানে সন্তান শোকে আমি পাগল প্রায়। এ কথা বলেই সে হাউ মাউ করে অঝোরে কেদে ফেলে।
মনিরুজ্জামান মনির আরো জানান, একাধিক ব্যক্তি আমাকে আমার স্ত্রীর পরকিয়া সম্পর্কে অবহিত করে। আমারও ধারনা সে কারো সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত। তার মিথ্যা মামলায় আমার ষার্টোধ বয়সী বৃদ্ধা মাকে আদালতে হাজির হতে হয়েছে। এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে স্ত্রী সন্তানদের ফিরে পেতে স্থানীয় প্রশাসেন সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
অভিযোগের সততা যাচাই করতে গিয়ে জানা যায়, রোকসানার ইসলাম নিজেও একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণার অভিযোগে বর্তমানে বিভিন্ন মামলার আসামী।
রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের চলমান ইউপি সদস্য দিন ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, রোকসানা ইসলাম সম্পর্কে আমার আত্মীয়। সে বাড়ী ক্রয় করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ষোল লক্ষ টাকা ধার নেয়। এক বছর পরে উক্ত টাকা ফেরত চাইলে সে দেই-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করতে থাকে। পরে গ্রাম্য-সালিশের মাধ্যমে সে আমাকে ষোল লক্ষ টাকার একটি চেক দেয়। উক্ত চেক বার বার জমা দিলেও টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়। পরে আমি তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করি। বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে।
এছাড়াও তার পারিবারিকভাবে খোজ নিলে তার আপন ভাই আমিরুল ইসলামের স্ত্রী হাসিনা আক্তার জানান, আমার ননদ রোকসানা ইসলাম আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। বিভিন্ন মিথ্যা উপস্থাপন করে তার মাদকাশক্ত ভাই আমিরুলের সাথে আমার বিয়ে দেয়। বিয়ে পরে জানতে পারি আমি তার চতুর্থ স্ত্রী। একাধিকবার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেও পরকালের কথা চিন্তা করে ও মুরুব্বীদের পরামর্শ নিয়ে আত্মহত্যা করি নাই। শতকষ্টের তার সংসারে থাকার চেষ্ঠা করি। কিন্তু আমার স্বামী-শশুর একসাথে নেশাগ্রস্থ হয়ে আমার উপর নির্যাতন করে এবং বাবার বাড়ি হইতে টাকা এনে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই চাপ প্রয়োগ করে। পর্যায়ক্রমে আমি আমার বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা স্বামীকে ব্যবসার জন্য এনে দেই। কিন্তু সে এ টাকা ইয়াবা সেবন ও মদ্যপান করে নস্ট করে ফেলে। এসব বিষয়ে কথা বললেই আমার উপর নির্যাতন চালায়। একাধিকার স্থানীয় সমাজপ্রতিদের মাধ্যমে আমি তাদের বাড়িতে যায়। কিন্ত গত ১১/০৭/২২ তারিখে আবারো আমার বাবার বাড়ি হতে টাকা এনে দেওয়ার জন্য শারীরিক নির্যাতন করে রাতের আধারে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে প্রতিবেশিরা আমাকে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করায়। খবর পেয়ে আমার বাবার বাড়ির লোকজন চিকিৎসা শেষে আমাকে বাড়ি নিয়ে যায়। পরে আমি আমার শশুর, স্বামী ও ননদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মামলা নং ২১০/২২। মামলার খবর পেয়ে আমার ননদ রোকসানা ইসলাম, স্বামী আমিরুল ইসলাম ও শশুর ফখরুল ইসলাম বাড়ীতে এসে আমার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ অপমান সইতে না পেরে ঐদিন রাতেই আমার বাবা স্ট্রোক করে মারা যায়। এ কথা বলেই হাসিনা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মনিরের মা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলেন, অনেক আদর কইরা নাতীগুলিরে পালছি, লাইজ্জের দিন ধইরা দেহি না। হেরার লাইগা মনডা কান্দে।
এ ব্যাপারে রোকসানা ইসলামের কর্মস্থল বাশঁগাড়ী ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নূরউদ্দিন বলেন, রোকসানা ইসলামকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেকবার পরামর্শ দিয়েছি। আজকে কর্মস্থলে রোকসানা ইসলাম উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, সে মামলার কারনে আদালতে আছেন বলে আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। ছুটি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত দিনে ছুটি নিয়েই আদালতে যেতেন কিন্তু আজ ছুটি নেননি।
এব্যাপারে রোকসানা ইসলামের সাথে সরাসরি কথা বলতে তার বিদ্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হয় প্রতিবেদক। অতপর কয়েক দিন পরে কথা হয় রোকসানা ইসলামের সাথে। তিনি স্বামীর অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার উপর আনিত সকল অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। আমার সংসারে চারটি সন্তান থাকার পরেও আমাকে না জানিয়ে অন্যত্র আরো একটি বিয়ে করে। বিয়ের তিন বছর পরে জানতে পেরে হতভম্ব ও বাকরুদ্ধকর অবস্থায় আমার ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে সে আমার খোজ খবর না নিয়ে আমাকে ঘায়েল করার জন্য আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের সহ বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোহাগ মিয়া বলেন, বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কথা হয় রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। মানুষ গড়ার কারিগর যদি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে আমাদের কি করার আছে। উভয় পক্ষের মামলা আদালতে চলমান। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশক্রমে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।